
আপনার কিডনি ঠিক আছে তো ?
সারাদিনের কাজের ব্যস্ততার জন্য আমরা ঠিকমতন নিজেদের দিকে নজর দিতে পারি না যার ফলে আমাদের মধ্যে নানান ধরনের প্রবলেম দেখা দেয়।আচ্ছা আপনার কি দিনের বেশিরভাগ সময় দুর্বল লাগে? খিদে পায় না বা সব সময় মেজাজ খিটখিটে থাকে? বারবার টয়লেটে যেতে হয় বা কোমরে সব সময় ব্যাথা থাকে আপনার? এই সমস্ত উপসর্গ যদি আপনার মধ্যে থাকে তাহলে হয়তো আপনার কিডনি খারাপ হওয়ার দিকে এগোচ্ছে। যদি সঠিক সময়ে এই সমস্যার ট্রিটমেন্ট না করান তাহলে আপনার দুটো কিডনিই খারাপ হতে পারে।
কি চিন্তায় পড়ে গেলেন? নিশ্চয়ই ভাবছেন কিভাবে বুঝতে পারবেন আপনি? আজকের প্রতিবেদনে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব….
কিডনি আমাদের শরীরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা অঙ্গ। তবে একটা কথা সকলেরই জানা উচিত, কিডনি খারাপ হওয়ার আগে অনেক ধরনের লক্ষণ দেখা যায়। সেই লক্ষণগুলো আপনাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। ভাবছেন কি করে বুঝবেন? না, চিন্তার কোন কারণ নেই। সেই লক্ষণ গুলো আজ আপনাদের আমরা জানিয়ে দেবো।
1) ক্লান্তি ভাব….যদি আপনি রাতে সঠিক পরিমাণ ঘুমানো সত্ত্বেও সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর সারাদিন আপনার শরীরে ক্লান্তি বা দুর্বল ভাব থাকে। তাহলে বুঝতে হবে এই লক্ষণ হচ্ছে আপনার কিডনি আস্তে আস্তে খারাপ হওয়ার দিকে এগোচ্ছে কারণ কিডনি যখন খারাপ হয় তখন তা রক্তকে পুরোপুরি ফিল্টার করতে পারেনা। তার ফলে রক্তের মধ্যে বিষাক্ত পদার্থ মিশতে শুরু করে এবং আমরা সারাদিন একটা ক্লান্ত ভাব অনুভব করি। বন্ধুরা আপনি যদি এরকম কোন লক্ষণ নিজের মধ্যে দেখেন তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যান।
2) কিডনি খারাপ হওয়ার দ্বিতীয় লক্ষণ হল আপনার মধ্যে একটা সব সময় খিটখিটে ভাব দেখা দেবে। দেখবেন আপনার মধ্যে কোন টেনশন নেই বা আপনার মন শান্ত আছে বা আপনি এমন কোন সুন্দর পরিবেশে গেছেন যেখানে সবাই খুশি তাও দেখবেন আপনি নিজের মধ্যে একটা খিটখিটে ভাব লক্ষ্য করছেন। এটা হওয়ার কারণ হচ্ছে যখন কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তখন রক্ত পরিষ্কার হয় না। আর এই রক্ত যখন আপনাদের ব্রেনে গিয়ে পৌঁছায় তখন তাতে অক্সিজেনের মাত্রা অনেক কম থাকে ।আর এই কম অক্সিজেনের জন্যই আপনি সবকিছুতেই একটা বিরক্ত ভাব অনুভব করেন।
3) কিডনি খারাপ হওয়ার আরো একটা লক্ষণ যেটা মানুষের মধ্যে হামেশাই দেখা দেয় তা হচ্ছে সব সময় কোমরে ব্যথা। আপনার মধ্যে যদি এরকম কোন সমস্যা থাকে তাহলে দেরি না করে খুব তাড়াতাড়ি চিকিৎসা করান। কারণ সময় থাকতে চিকিৎসা যদি করাতে পারেন তাহলে আপনি আপনার কিডনি খারাপ হওয়া থেকে বাঁচাতে পারবেন।
4) যদি আপনার মধ্যে বারবার বমি হওয়ার লক্ষণ থাকে বা খিদে না পায়, কিছু খেতে ইচ্ছা না করে । তাহলে এটাও কিন্তু আপনার কিডনি খারাপ হওয়ার আরো একটি লক্ষণ। রক্ত পিউরিফাই না হওয়ার জন্য আমাদের শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমা হতে শুরু করে ।যার ফলে আমাদের পাচন ক্রিয়া ও পুরো বডি ফাংশান ধীরে ধীরে খারাপ হতে শুরু করে।
4) যদি আপনার বারবার প্রস্রাব পায় তাহলে এটা কিন্তু কিডনির কাজ করতে না পারার সংকেত হতে পারে । কিডনির সমস্যা তখনই হয় যখন আপনার কিডনির ফিল্টার খারাপ হয়ে যায়। যার ফলে আপনি যাই খান কিডনি সেটা ফিল্টার করতে পারে না এবং প্রস্রাবের দ্বারা বার করে দেয়। যার জন্য আপনার বারবার প্রস্রাব পায়। যার ফলে অনেক সময় ইউরিন ইনফেকশনও হতে পারে। কিন্তু অনেক সময় মানুষ এসব লক্ষণ দেখেও ইগনোর করতে শুরু করে। যার ফলে কিডনি খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে থাকে ।
5) কিডনি খারাপ হওয়ার পঞ্চম লক্ষণ হলো….আপনি যদি গরম কালেও ঠান্ডা অনুভব করেন বা আপনার জল তেষ্টা না পায় বা আপনার সব সময় ঘুম পায় তাহলে বুঝে নিন আপনার কিডনি খুব দ্রুততার সঙ্গে খারাপ হচ্ছে।এর জন্য চিকিৎসা খুব তাড়াতাড়ি করানো উচিত।
6) শরীরে কিছু কিছু জায়গা যেমন হাতে পায়ে ফোলা ভাবের লক্ষন এটা বোঝাই যে আপনার কিডনি আস্তে আস্তে খারাপ হতে চলেছে। এটা হওয়ার কারণ হচ্ছে কিডনি খারাপ হওয়ার পরে আপনার শরীরের অতিরিক্ত জল এবং লবণ শরীরের বাইরে বেরোতে পারে না তাই শরীরে ফোলা ভাব দেখা দেয়।
7) অতিরিক্ত হাই ব্লাড প্রেসার কিডনি খারাপ হওয়ার লক্ষণ। তবে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই হাই ব্লাড প্রেসার দেখা যায়। আর বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ধরনের প্রবলেম দেখা দেয়। কিন্তু আপনার বয়স যদি ৩০ বছরের কম হয় এবং আপনার মধ্যে হাই ব্লাড প্রেসার এর সমস্যা হামেশাই দেখা দেয় ,তাহলে আপনার একবার কিডনির Renal Function Test ( RFT ) অবশ্যই করিয়ে নেওয়া উচিত।তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার কিডনি কি পর্যায় আছে।
8) অনেক সময় দেখা গেছে কিডনি যেই আস্তে আস্তে খারাপ হতে শুরু করে তখনই শরীরের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয়। তেমনি একটা রোগ হচ্ছে অ্যানিমিয়া। যখন কিডনি খারাপ হয় তখন অনেক মানুষই অ্যানিমিয়া নামক রোগে আক্রান্ত হয়। এই ধরনের অসুখের ফলে শরীরে রক্তের অভাব দেখা দেয় ।
9) অনবরত যদি আপনার শরীরে চুলকানির সমস্যা দেখা দেয় তাহলে এটা হওয়ার কারণ আপনার খারাপ কিডনি । এমন তখনই হয় যখন আমাদের কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এবং আমাদের শরীরের রক্ত পিউরিফাই হয় না। এর ফলে টক্সিন আমাদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং কোষগুলোকে নষ্ট করে দেয়। আর যেখানে কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায় সেখানেই বেশি চুলকুনি হতে শুরু করে ।
10) প্রস্রাব করার সময় আপনি যদি জ্বালা বা ব্যথা অনুভব করেন । তাহলে দেরি না করে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে যান কারণ এই ধরনের সংকেত বোঝায় যে আপনার কিডনি ঠিকঠাক কাজ করছে না। ব্লাড কে পুরোপুরি পিউরিফাই করতে না পারার জন্য টক্সিন যেহেতু সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এর জন্য আস্তে আস্তে ইউরিনে ইনফেকশন পর্যন্ত হতে পারে। যার ফলে ইউরিন করার সময় জ্বালা ভাব ও ব্যাথা ভাব আপনি অনুভব করেন। পাশাপাশি ইউরিনের কালার হলুদ হতে শুরু করে ।
কি বন্ধুরা আপনারা বুঝতে পারলেন তো, আপনার কিডনি সুস্থ আছে নাকি আস্তে আস্তে খারাপ হচ্ছে কি করে বুঝবেন? তাই বছরে একবার অন্তত আপনার কিডনির চেকআপ করান ।